বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে তালেবান

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে তালেবান

স্বদেশ ডেস্ক:

আফগানিস্তান বিশ্বের মধ্যে সপ্তম দরিদ্র দেশ। পশ্চিমা দেশগুলোর ত্রাণ সহায়তাই দেশটির অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি। কিন্তু আফগান সরকার হটিয়ে তালেবানরা ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অস্থির রাজনীতিক পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠীগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯.৫ বিলিয়ন ডলার জব্দ করেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সহায়তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতসহ দেশগুলো পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। খবর আল জাজিরা ও বিবিসি।

বিবিসির খবরে বলা হয়, সপ্তম দিনের মতো গতকাল শনিবার আফগানিস্তানজুড়ে ব্যাংকগুলোর তালা বন্ধ ছিল। সেখানে কোনো ধরনের লেনদেন করা যায়নি। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে অর্থ পাঠানো বা আফগানিস্তান থেকে অর্থ প্রেরণ কার্যত অসম্ভব।

এদিকে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, আইএমএফ করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ত্রাণ সহায়তা বন্ধের পর এখন তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে আরও সহায়তায় বন্ধ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও তালেবান নেতৃবৃন্দ আশ্বাস দিচ্ছেন যে, তারা ‘সর্বজন স্বীকৃত’ সরকার গঠন করতে যাচ্ছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।

আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আজমল আহমেদি জানান, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৯০০ কোটি ডলার। কিন্তু তালেবানরা কাবুল দখলের প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্বর্ণ ও ৩০০ মিলিয়নের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। গভর্নর আরও জানান, মার্কিন দৃষ্টিতে তালেবান ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হওয়ায় ওই রিজার্ভ ফেরত পাওয়া তালেবানের জন্য কঠিন হবে। তার কথায়, তালেবান সামরিকভাবে জয়ী হয়েছে। এখন তারা দেশ পরিচালনা করতে যাচ্ছে, কিন্তু এটি তাদের জন্য মসৃণ হবে না। এ ছাড়া মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত জার্মানিও আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করার কথা জানিয়েছে।

এদিকে তালেবানের ওপর দীর্ঘদিন থেকেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার খড়্্্গ রয়েছে। এতে গত পাঁচ বছরে আফিমসহ অন্য পণ্যের বাণিজ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ কমে এসেছে। অন্যদিকে বর্তমান সংঘাতের কারণে যুদ্ধ আফগানিস্তানে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটে রয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। এতে দেশটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কান্ট্রিপ্রধান মেরি এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি জানান, তালেবান আফগানিস্তানে আশায় দেশটি দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। তালেবান ও অন্যান্য চরপমন্থি গোষ্ঠীর ওপর জাতিসংঘের নজরদারি দলের সাবেক সমন্বয়ক হ্যানস জেকব শিন্ডলার বলেন, দেশকে ঠিকঠাক চালানোর মধ্যে যথেষ্ট অর্থ তালেবানের হাতে নেই।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী আফগানিস্তান হলো বিশ্বের বড় আফিম রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু তালেবানের নতুন শাসনে মাদকবাণিজ্য নিষেধ হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তালেবান নেতৃবৃন্দের এ ছাড়া তেমন কোনো উপায়ও নেই। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, তালেবানরা খনি বাণিজ্য থেকে অবৈধ অর্থ আয় করত। ইরান, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার বেনামে নিয়মিত অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877